আদি শঙ্কর (
সংস্কৃত:
आदिशङ्करः) (৭৮৮-৮২০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন একজন ভারতীয় দার্শনিক। ভারতীয় দর্শনের
অদ্বৈত বেদান্ত নামের শাখাটিকে তিনি সুসংহত রূপ দেন।
[১][২] তাঁর শিক্ষার মূল কথা ছিল
আত্ম ও
ব্রহ্মের সম্মিলন। তাঁর মতে ব্রহ্ম হলেন
নির্গুণ।
[৩]
আদি শঙ্কর অধুনা
কেরল রাজ্যের
কালাডি
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি সারা ভারত পর্যটন করে অন্যান্য
দার্শনিকদের সঙ্গে আলোচনা ও বিতর্কে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজের দার্শনিক
মতটি প্রচার করেন। তিনি চারটি
মঠ
প্রতিষ্ঠা করেন। এই মঠগুলি অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের ঐতিহাসিক বিকাশ,
পুনর্জাগরণ ও প্রসারের জন্য বহুলাংশে দায়ী। শঙ্কর নিজে অদ্বৈত বেদান্ত
দর্শনের প্রধান প্রবক্তা হিসেবে খ্যাত।
[২] এছাড়া তিনি হিন্দু সন্ন্যাসীদের
দশনামী সম্প্রদায় ও হিন্দুদের পূজার
সন্মত নামক পদ্ধতির প্রবর্তক।
সংস্কৃত ভাষায় লেখা আদি শঙ্করের রচনাবলির প্রধান লক্ষ্য ছিল
অদ্বৈত তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা। সেযুগে হিন্দু দর্শনের
মীমাংসা শাখাটি অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতার উপর জোর দিত এবং সন্ন্যাসের আদর্শকে উপহাস করত। আদি শঙ্কর
উপনিষদ্ ও
ব্রহ্মসূত্র অবলম্বনে সন্ন্যাসের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি উপনিষদ্, ব্রহ্মসূত্র ও
ভগবদ্গীতার ভাষ্যও রচনা করেন। এই সব বইতে তিনি তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ মীমাংসা শাখার পাশাপাশি হিন্দু দর্শনের
সাংখ্য শাখা ও বৌদ্ধ দর্শনের মতও খণ্ডন করেন।
[৩][৪][৫]
জীবনী
প্রচলিত মত অনুসারে,
শঙ্কর বিজয়ম
নামক বইগুলিতে শঙ্করের জীবনকথা লেখা আছে। এই বইগুলি আসলে মহাকাব্যের আকারে
পদ্যে লেখা ইতিহাস-সম্মত জীবনী ও প্রচলিত কিংবদন্তির মিশ্রণ। এই জাতীয়
কাব্যধারায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বই হল
মাধব শঙ্কর বিজয়ম (মাধবের লেখা, ১৪শ শতাব্দী),
চিদবিলাস শঙ্কর বিজয়ম (চিদবিলাসের লেখা, ১৫শ থেকে ১৭শ শতাব্দী) ও
কেরলীয় শঙ্কর বিজয়ম (কেরল অঞ্চলে প্রচলিত, রচনাকাল ১৭শ শতাব্দী)।
[৬][৭]
জন্ম ও শৈশব
কালাডি গ্রামে আদি শঙ্করের জন্মস্থান
শঙ্কর এক রক্ষণশীল
হিন্দু
পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবার নাম ছিল শিবগুরু ও মায়ের নাম
আর্যাম্বা। তাঁরা অধুনা কেরল রাজ্যের অন্তর্গত কালাডি গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন। জনশ্রুতি, শঙ্করের বাবা-মা অনেক দিন ধরেই নিঃসন্তান ছিলেন। তাই তাঁরা
ত্রিশূরের বৃষভচল শিবমন্দিরে পুত্রকামনা করে পূজা দেন। এরপর
আর্দ্রা নক্ষত্রের বিশেষ তিথিতে শঙ্করের জন্ম হয়।
[৮][৯]
শঙ্কর যখন খুব ছোট, তখন তাঁর বাবা মারা যান। এই জন্য শঙ্করের
উপনয়নে দেরি হয়। পরে তাঁর মা উপনয়ন করান।
[১০] শঙ্কর ছেলেবেলা থেকেই খুব বিদ্বান ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি চারটি
বেদ আয়ত্ত্ব করে নেন।
[১১]
সন্ন্যাস
সাত বছর থেকে শঙ্কর
সন্ন্যাস
গ্রহণের দিকে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু তাঁর মা তাঁকে অনুমতি দিতে চাইছিলেন না।
শেষে তিনি খুব আশ্চর্যজনকভাবে মায়ের অনুমতি পান। কথিত আছে, একদিন তিনি
পূর্ণা নদীতে স্নান করছিলেন। এমন সময় একটি কুমির তাঁর পা কামড়ে ধরে।
শঙ্করের মাও সেই সময় পূর্ণার তীরে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মা-কে বলেন, মা যদি
সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দেন, তাহলে কুমিরটি তার পা ছেড়ে দেবে। ছেলের
প্রাণ বাঁচাতে মা তাঁকে সন্ন্যাস গ্রহণের অনুমতি দিলেন। তার পর থেকে
কোনোদিন পূর্ণা নদীকে কোনো কুমিরকে দেখা যায়নি।
[১২]
শঙ্কর কেরল ত্যাগ করে
গুরুর খোঁজে উত্তর ভারতের দিকে রওনা হলেন।
নর্মদা নদীর তীরে
ওঙ্কারেশ্বরে তিনি
গৌড়পাদের শিষ্য
গোবিন্দ ভগবদপাদের দেখা পান। গোবিন্দ শঙ্করের পরিচয় জানতে চাইলে, শঙ্কর মুখে মুখে একটি শ্লোক রচনা করেন। এই শ্লোকটিই
অদ্বৈত বেদান্ত তত্ত্ব প্রকাশ করে। গোবিন্দ তা শুনে খুব খুশি হন এবং শঙ্করকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন।
[১৩]
গোবিন্দ শঙ্করকে
ব্রহ্মসূত্রের একটি ভাষ্য লিখতে এবং অদ্বৈত মত প্রচার করতে বলেন। শঙ্কর
কাশীতে আসেন। সেখানে
সনন্দন
নামে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যায়। এই যুবকটি দক্ষিণ ভারতের চোল
রাজ্যের বাসিন্দা ছিল। সে-ই প্রথম শঙ্করের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কথিত আছে,
কাশীতে
বিশ্বনাথ মন্দির
দর্শন করতে যাওয়ার সময় এক চণ্ডালের সঙ্গে শঙ্করের দেখা হয়ে যায়। সেই
চণ্ডালের সঙ্গে চারটি কুকুর ছিল। শঙ্করের শিষ্যরা চণ্ডালকে পথ ছেড়ে
দাঁড়াতে বললে, চণ্ডাল উত্তর দেয়, "আপনি কী চান, আমি আমার
আত্মকে সরাই না এই রক্তমাংসের শরীরটাকে সরাই?" শঙ্কর বুঝতে পারেন যে, এই চণ্ডাল স্বয়ং
শিব এবং তার চারটি কুকুর আসলে চার বেদ। শঙ্কর তাঁকে প্রণাম করে পাঁচটি শ্লোকে বন্দনা করেন। এই পাঁচটি শ্লোক "
মণীষা পঞ্চকম্" নামে পরিচিত।
[১৪][১৫]
বদ্রীনাথে বসে তিনি তাঁর বিখ্যাত ভাষ্য (টীকাগ্রন্থ) ও প্রকরণগুলি (দর্শনমূলক প্রবন্ধ) রচনা করেন।
[১৬][১৭]
মন্দন মিশ্রের সাথে সাক্ষাৎ
আদি শঙ্করের সবচেয়ে বিখ্যাত বিতর্কসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল
আচার-অনুষ্ঠান কঠোরভাবে পালনকারী মন্দন মিশ্রের
সঙ্গে তর্ক। মন্দন মিশ্র এ দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করতেন যে গৃহস্থের জীবন একজন
সন্ন্যাসীর জীবনের থেকে অনেক শ্রেয়। সে সময়ে ভারতব্যাপী এ দৃষ্টিভঙ্গিকে
ব্যাপকভাবে সম্মান করা হতো।
[১৮] এতদনুসারে তার সাথে আদি শঙ্করের বিতর্ক করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মন্দন মিশ্রের গুরু ছিলেন বিখ্যাত মীমাংসা দার্শনিক
কুমারিলা ভট্ট। শঙ্কর কুমারিলা ভট্টের সাথে একটি বিতর্ক চান এবং তার সঙ্গে
প্রয়াগে
দেখা করেন যেখানে তিনি তার গুরুর বিরুদ্ধে করা পাপের জন্য অনুশোচনা করার
জন্য নিজেকে একটি মৃদু জ্বলন্ত চিতাতে সমাহিত করেছিলেন: কুমারিলা ভট্ট তার
বৌদ্ধ গুরুর নিকট মিথ্যা ছলে
বৌদ্ধ দর্শন
শিখেছিলেন একে অসত্য/অমূলক বলে প্রতিপন্ন করার জন্য। বেদ অনুসারে কেউ
গুরুর কর্তৃত্বের অধীণে থেকে তাঁর অজ্ঞাতসারে কিছু শিখলে তা পাপ বলে
বিবেচিত হয়।
[১৯] সুতরাং কুমারিলা ভট্ট তার পরিবর্তে আদি শঙ্করকে মহিসমতিতে (বর্তমানে
বিহারের সহরসা জেলার
মহিষী নামে পরিচিত) গিয়ে মন্দন মিশ্রের সাথে দেখা করে তার সঙ্গে বিতর্ক করতে বলেন।
পনের দিনের অধিক বিতর্ক করার পর মন্দন মিশ্র পরাজয় স্বীকার করেন,
যেখানে মন্দন মিশ্রের সহধর্মিণী উভয়া ভারতী বিচারক হিসেবে কাজ করেন।
[২০]
উভয়া ভারতী তখন আদি শঙ্করকে 'বিজয়' সম্পূর্ণ করার জন্য তার সঙ্গে
বিতর্কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি আদি শঙ্করকে পুরুষ ও
মহিলার মধ্যকার যৌন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন করেন - যে বিষয়ে
শঙ্করাচার্যের কোন জ্ঞান ছিল না, কারণ তিনি ছিলেন কুমার এবং সন্ন্যাসী।
শ্রী শঙ্করাচার্য ১৫ দিনের "বিরতি" চান। লোককাহিনী অনুসারে তিনি "পর-কায়া
প্রবেশের" শিল্প (আত্মা এর নিজের দেহ থেকে বের হয়ে অন্যের দেহে প্রবেশ)
ব্যবহার করেন এবং তাঁর নিজের দেহ থেকে বের হন, যেটি(দেহ) তিনি তাঁর
শিষ্যদের দেখাশোনা করার জন্য বলেন এবং দৈহিকভাবে একজন রাজার মৃতদেহে প্রবেশ
করেন। গল্পে আছে যে রাজার দুই স্ত্রীর নিকট তিনি "ভালবাসা শিল্পের" সকল
জ্ঞান অর্জন করেন। রানীরা "পুনরুজ্জীবিত" রাজার তীক্ষ্ন মেধা ও প্রবল
ভালবাসায় রোমাঞ্চিত হয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে তিনি তাদের পুরনো স্বামী
ছিলেন না। গল্পটি আরো বলে যে তারা তাদের রাতদিনের কাজের লোকদের "এক যুবক
সাধুর প্রাণহীন দেহ অনুসন্ধান করতে এবং তা শীঘ্র দাহ করতে" পাঠান যাতে
তাদের "রাজা" (রাজার দেহে শঙ্করাচার্য) তাদের সাথে বাস করা অব্যাহত রাখেন।
চাকররা শঙ্করাচার্যের প্রাণহীন দেহ চিতার উপর রেখে এতে আগুন দিতে যাওয়া
মাত্রই শঙ্কর তাঁর নিজের দেহে প্রবেশ করেন এবং পুনরায় জ্ঞান ফিরে পান।
পরিশেষে তিনি উভয়া ভারতীর সকল প্রশ্নের উত্তর দেন; এবং উভয়া ভারতী
বিতর্কের পূর্ব-সম্মত নিয়মানুসারে মন্দন মিশ্রকে সুরেশ্বরাচার্য
সন্ন্যাসী-নাম ধারণ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করার অনুমতি দেন।
[২১]
দার্শনিক ভ্রমণ
আদি শঙ্কর তারপর তাঁর শিষ্যদের সাথে নিয়ে
মহারাষ্ট্র ও
শ্রীশৈলম ভ্রমণ করেন। শ্রীশৈলে তিনি শিবের প্রতি ভক্তিমূলক স্তোত্রগীত
শিবানন্দলাহিড়ী রচনা করেন।
মাধবীয়া শঙ্করাবিজয়াম অনুসারে যখন শঙ্কর
কপালিকা দ্বারা বলি হতে যাচ্ছিলেন, পদ্মপদাচার্যের প্রার্থনার উত্তরস্বরুপ ভগবান
নরসিংহ শঙ্করকে রক্ষা করেন। ফলস্বরুপ আদি শঙ্কর লক্ষ্মী-নরসিংহ স্তোত্র রচনা করেন।
[২২]
তারপর তিনি
গোকর্ণ, হরি-শঙ্করের মন্দির এবং
কোল্লুড়ে মুকাম্বিকা
মন্দির ভ্রমণ করেন। কোল্লুড়ে তিনি এক বালককে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন যে
বালকটিকে তার পিতামাতা বাকশক্তিহীন বলে মনে করতেন। শঙ্কর তার নাম দেন
হস্তামলকাচার্য ("বৈঁচি-জাতীয় ফল হাতে কেউ", অর্থাৎ যিনি নিজেকে পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করেছেন)। পরবর্তীতে তিনি
সারদা পীঠ প্রতিষ্ঠা করতে
শৃঙ্গেরী ভ্রমণ করেন এবং
তোটকাচার্যকে তাঁর শিষ্য বানান।
[২৩]
এরপর আদি শঙ্কর অদ্বৈত দর্শনের বিরোধিতা করা সকল দর্শন অস্বীকারের দ্বারা এর প্রচারের জন্য
দিগ্বিজয় ভ্রমণ শুরু করেন। তিনি দক্ষিণ ভারত হতে
কাশ্মীর
অভিমুখে ভারতের সর্বত্র এবং নেপাল ভ্রমণ করেন এবং পথিমধ্যে সাধারন মানুষের
মাঝে দর্শন প্রচার করেন এবং হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য পন্ডিত ও
সন্ন্যাসীদের সাথে দর্শন বিষয়ে তর্ক করেন।
মালয়ালী রাজা সুধনভকে সঙ্গী হিসেবে নিয়ে শঙ্কর
তামিলনাড়ু,
অন্ধ্রপ্রদেশ এবং
বিদর্ভের মধ্য দিয়ে যান। এরপর তিনি
কর্ণাটকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন যেখানে তিনি একদল সশস্ত্র
কাপালিকের সামনে পড়েন। রাজা সুদনভ তার সঙ্গীদের নিয়ে প্রতিরোধ করেন এবং কাপালিকাদের পরাজিত করেন। তারা নিরাপদে
গোকর্ণে পৌঁছান যেখানে শঙ্কর বিতর্কে
শৈব পন্ডিত নীলাকান্তকে পরাজিত করেন।
সৌরাষ্ট্রের (প্রাচীন
কম্বোজ)
দিকে অগ্রসর হয়ে এবং গিরনার, সোমনাথ ও প্রভাসার সমাধিমন্দিরসমূহ ভ্রমণ
শেষে এবং এ সকল স্থানে বেদান্তের শ্রেষ্ঠত্ব ব্যাখ্যা করে তিনি
দ্বারকা পৌঁছান।
উজ্জয়িনীর ভেদ-অভেদ দর্শনের প্রস্তাবক ভট্ট ভাস্কর হতগর্ব হলেন। উজ্জয়িনীর সকল পন্ডিত (
অবন্তী নামেও পরিচিত) আদি শঙ্করের দর্শন গ্রহণ করলেন।
এরপর তিনি
বাহলিকা নামক এক জায়গায় দার্শনিক বিতর্কে
জৈনদের পরাজিত করেন। তারপর তিনি
কম্বোজ (উত্তর
কাশ্মীরের এলাকা),
দারোদা
ও মরুভূমিটিতে অবস্থিত অনেক এলাকার কয়েকজন দার্শনিক এবং তপস্বীর উপর তাঁর
বিজয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রকান্ড পর্বতচূড়া অতিক্রম করে কাশ্মীরে
প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে তিনি
কামরূপে এক
তান্ত্রিক নবগুপ্তের সম্মুখীন হন।
[২৪]
সারদা পীঠে আরোহণ
আদি শঙ্কর কাশ্মীরে (বর্তমানে
পাকিস্তান-দখলকৃত কাশ্মীর)
সারদা পীঠ ভ্রমণ করেন।
[২৫] মাধবীয়া শঙ্করাবিজয়ম
অনুসারে এ মন্দিরে চারটি প্রধান দিক থেকে পন্ডিতদের জন্য চারটি দরজা ছিল।
দক্ষিণ দরজা (দক্ষিণ ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী) কখনই খোলা হয়নি যা নির্দেশ
করত যে দক্ষিণ ভারত থেকে কোনো পন্ডিত সারদা পীঠে প্রবেশ করেনি। সকল জ্ঞানের
শাখা যেমন
মীমাংসা,
বেদান্ত এবং অন্যান্য
হিন্দু দর্শনের
শাখাসমূহে সকল পন্ডিতকে বিতর্কে পরাজিত করে আদি শঙ্কর দক্ষিণ দরজা খোলেন;
তিনি সে মন্দিরের সর্বোৎকৃষ্ট জ্ঞানের সিংহাসনে আরোহণ করেন।
[২৬]
তাঁর জীবনের শেষদিকে আদি শঙ্কর হিমালয়ের এলাকা
কেদারনাথ-
বদ্রীনাথে যান এবং
বিদেহ মুক্তি
("মূর্তরুপ থেকে মুক্তি") লাভ করেন। কেদারনাথ মন্দিরের পিছনে আদি শঙ্করের
প্রতি উৎসর্গীকৃত সমাধি মন্দির রয়েছে। যাহোক, স্থানটিতে তাঁর শেষ দিনগুলির
বিভিন্ন পরম্পরাগত মতবাদ রয়েছে।
কেরালীয়া শঙ্করাবিজয়াতে ব্যাখ্যাকৃত এক পরম্পরাগত মতবাদ তাঁর মৃত্যুর স্থান হিসেবে কেরালার
থ্রিসুরের বদাক্কুন্নাথান মন্দিরকে নির্দেশ করে।
[২৭] কাঞ্চী কামাকোটি পীঠের অনুসারীরা দাবি করেন যে তিনি
সারদা পীঠে আরোহণ করেন এবং কাঞ্চীপুরমে (
তামিলনাড়ু)
বিদেহ মুক্তি লাভ করেন।
মঠসমূহ
আদি শঙ্কর হিন্দু ধর্মের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করার জন্য চারটি
মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলো দক্ষিণে
কর্ণাটকের শৃঙ্গেরীতে, পশ্চিমে
গুজরাটের দ্বারকায়, পূর্বে
ওড়িশার পুরীতে এবং উত্তরে
উত্তরখন্ডের জ্যোতির্মঠে (যশীমঠে)। হিন্দু পরম্পরাগত মতবাদ বিবৃত করে যে তিনি এসব মঠের দায়িত্ব দেন তাঁর চারজন শিষ্যকে যথাক্রমে:
সুরেশ্বরাচার্য,
হস্তামলকাচার্য,
পদ্মপাদ এবং
তোটকাচার্য। এ চারটি মঠের প্রত্যেক প্রধান প্রথম শঙ্করাচার্যের নামানুসারে
শঙ্করাচার্য ("পন্ডিত শঙ্কর") উপাধি গ্রহণ করেন।
[২৮]